নিজস্ব প্রতিনিধি, মিরসরাই নিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম » » » ঘরে বসে থাকতে থাকতে যখন দমবন্ধ অবস্থা, তখন একটু খোলা বাতাসে না গেলে যেন চলেই না। সঙ্গে যদি পাওয়া যায় একটু পানির শীতলতা আর পাহাড়ের মনোরম সবুজ দৃশ্য, তাহলে তো কথাই নেই। মন-প্রাণ ভরে উপভোগ করার জন্য আর কী চাই। সেজন্য যখন নিজের যান্ত্রিক জীবন থেকে একটু বিরতি খুঁজছেন, তখন বেড়িয়ে আসতে পারেন চট্টগ্রামে অবস্থিত ফয়’স লেক থেকে। এখানে হ্রদের শীতলতার সাথে বোনাস হিসেবে পাবেন প্রাকৃতিক সবুজ পাহাড় আর বনায়নের মিশেলে চমৎকার উপভোগ্য দৃশ্য।
শুরুতে জেনে নিই এই ফয়’স লেকের ইতিহাস। অনেকে মনে করেন, ফয়’স লেক প্রাকৃতিক একটি হ্রদ। কিন্তু মজার ব্যাপার হচ্ছে, একটি মানবসৃষ্ট হ্রদ ফয়’স লেক। এটি আসাম-বেঙ্গল রেলওয়ে কোম্পানি দ্বারা ১৯২৪ সালে চট্টগ্রামের জলাশয় হিসেবে ব্যবহারের জন্য খনন করা হয়। লেকটি ব্রিটিশ প্রকৌশলীর ‘ফয়’-এর (foy) নামে নামকরণ করা হয়, যিনি এটির নকশা তৈরিতে সহায়ক ছিলেন। ফয়’স লেক একটি সংকীর্ণ উপত্যকা জুড়ে অন্য এক পাহাড় থেকে বাঁধ নির্মাণ করে তৈরি করা হয়েছে।
ফয়’স লেকে যেতে টিকেট কাটতে হবে দর্শনার্থীদের। অ্যামিউজমেন্ট ওয়ার্ল্ডের সাধারণ প্রবেশমূল্য ২৫০ টাকা। তিন ফুটের চেয়ে কম উচ্চতার শিশুদের প্রবেশ মূল্য লাগে না। এখানকার বিভিন্ন রাইডে চড়ার আলাদা আলাদা মূল্য রয়েছে। তবে প্রবেশ ও সব রাইডের বিশেষ প্যাকেজও আছে। বনভোজন দলের জন্য খাবারের আয়োজনসহ বিশেষ মূল্যও আছে ফয়’স লেকে। লেকের রিসোর্ট ভাড়া ৪,৯৩৫ থেকে ১০,৫০৮ টাকা পর্যন্ত। এ ছাড়া বাংলো ভাড়া ৫,৫৬৩ থেকে ৯,৮৯০ টাকা পর্যন্ত।
এবার জানা যাক, কেন যাবেন ফয়’স লেকে। চট্টগ্রামের পাহাড়তলি এলাকায় অবস্থিত ফয়’স লেক একটি চমৎকার বনভোজন ও বিনোদনের জায়গা। স্থানীয় ও আন্তর্জাতিক দর্শনার্থীদের আকর্ষণ করার মতো অন্যতম স্থান। এই লেকে দেখার মতো রয়েছে অনেক কিছু। শিশুদের জন্য যেমন নানা রকম রাইডের ব্যবস্থা আছে, তেমনি বড়রাও খুজেঁ পাবেন পাহাড়, লেক সব মিলে মনোমুগ্ধকর পরিবেশ।
অঞ্চলের চারদিকে পাহাড় আর মাঝখানে রয়েছে অরুনাময়ী, গোধূলী, আকাশমনি, মন্দাকিনী, দক্ষিণী, অলকানন্দা নামের হ্রদ। হ্রদের পাড়ে যেতেই দেখা মিলবে সারি সারি নৌকা। নৌকায় করে পার্কে যেতে মিনিট দশেক সময় লাগবে। মাঝে দেখা মিলবে দুই দিকে সবুজ পাহাড়, মাঝে মধ্যে দু-একটি বক এবং নাম না জানা হরেক রকম পাখি। এর সঙ্গে রয়েছে মনোরম পরিবেশে হরিণ বিচরণ স্থান। ফয়’স লেকের সবচেয়ে বড় আকর্ষণ হচ্ছে লেকের সৌন্দর্য ও তার পার্শ্ববর্তী পাহাড়।
হ্রদটিকে কেন্দ্র করে বাংলাদেশের সর্ববৃহৎ নির্মাণ প্রতিষ্ঠান কনকর্ড একটি বিনোদন উদ্যান স্থাপন করেছে যেখানে দর্শনার্থীদের জন্য হ্রদে নৌকাভ্রমণ, রেস্তোরাঁ, ট্র্যাকিং এবং কনসার্ট এর আয়োজন করা হয়ে থাকে। বর্তমানে এখানে বিরল প্রজাতির পাখি ও ডিয়ার পার্কে হরিণ দেখার ব্যবস্থা আছে। লেকে নৌকায় ভ্রমণ, ল্যান্ডস্কেপিং, রেস্টুরেন্ট, ভাসমান ধাপ কনসার্ট, নাটুকে হাঁটার পথ ও অন্যান্য অনেক মজার ও উপভোগের জিনিস রয়েছে।
দর্শনার্থীরা হ্রদটির মনোরম দৃশ্য উপভোগের জন্য নৌকাভ্রমণে যেতে পারেন। এখানে একটি অবকাশযাপন কেন্দ্র আছে যেখানে বিভিন্ন বয়সী ও রুচির মানুষের জন্য কিছু না কিছু উপাদান আছে। মানুষ ফয়’স লেকে মজা ও উত্তেজনার পাশাপাশি প্রশান্তি ও শান্তিতে থাকতে পারে।
ফয়’স লেকের ভিন্ন এক জগত ‘সী ওয়ার্ল্ড’। লেকের শেষ প্রান্তে গড়ে তোলা হয়েছে পানির রাজ্যে রোমাঞ্চকর জায়গা। ‘সী ওয়ার্ল্ড’ চট্টগ্রামের হৃদয়ে অবস্থিত ফয়’স লেকের একটি জল থিম পার্ক। স্প্লাশ পুল, ওয়াটার কোষ্টার রাইডার এবং বিশ্বমানের থিম পার্ক হিসেবে যা যা আশা করা যায় তার সবই সী ওয়ার্ল্ডে আছে।
এ ছাড়াও দর্শনার্থীরা কটেজ ভাড়া করে থাকতে পারেন। প্রকৃতির মাঝে নির্জনতায় অবকাশ যাপনের জন্য এখানে আছে বেশ কিছু রিসোর্ট। সী ওয়ার্ল্ডের পাশেই এর অবস্থান। রিসোর্টেও যেতে হয় নৌকায় চড়ে। নির্জনতায় সময় কাটানোর জন্য আদর্শ জায়গা এসব রিসোর্ট। লেক ও পাহাড়মুখী দুই ধরনের ঘরই আছে এখানে। বারান্দায় বসে লেক আর পাহাড়ের সৌন্দর্য উপভোগের ব্যবস্থা আছে এখানে। মধুচন্দ্রিমার জন্যও এখানকার রিসোর্ট আকর্ষণীয় জায়গা।
চট্টগ্রামের পাহাড়তলীর খুলশী এলাকার প্রধান সড়কের পাশে ফয়’স লেকের তোরণ। সেখান থেকে কিছুটা ভেতরে এর মূল প্রবেশ পথ। শুরুতেই ফয়’স লেকের অ্যামিউজমেন্ট ওয়ার্ল্ড। বেশ কিছু আধুনিক রাইড আছে এখানে। সার্কাস সুইং, বাম্পার কার, বাম্পার বোট, ফ্যামিলি রোলার কোস্টার, জায়ান্ট ফেরিস হুইল, ড্রাই স্লাইড, ফ্যামিলি ট্রেইন, প্যাডেল বোট, ফ্লোটিং ওয়াটার প্লে, পাইরেট শিপের মতো মজাদার সব রাইড।
এখান থেকে উপরে টিলায় আছে বনভোজন কেন্দ্র। সেখান থেকে আরেকটি টিলার উপরে পর্যবেক্ষণ টাওয়ার। চট্টগ্রাম শহরের বার্ডস আই ভিউ দেখা যায় জায়গাটি থেকে। অ্যামিউজমেন্ট ওয়ার্ল্ডের উত্তরে টিলার উপরে মূল ফয়’স লেক। লেকের দুইপাশে সবুজে ঘেরা উঁচু উঁচু পাহাড়। পাহাড়গুলোর নাম রাখা হয়েছে আসমানী, গগনদ্বীপ, জলটুঙ্গি ইত্যাদি। এসব পাহাড়েরর আছে সংরক্ষিত বন, সে বনে খেলা করে চিত্রা হরিণ, খরগোশ আরও কিছু বন্যপ্রাণী।
সব মিলিয়ে বলা যায়, শহুরে জীবন থেকে যদি একটু বিরতি চান, তবে কম খরচে এবং কম সময়ে ঘুরে বেড়ানোর জন্য ফয়’স লেকের জুড়ি নেই। তবে হাতে একদিন সময় নিয়ে বেড়াতে গেলে দর্শনার্থীরা সবক’টি জায়গা উপভোগ করতে পারবেন মন ভরে। এক বিকেলের মধ্যে ফয়’স লেকের মনোরম স্থানের সবগুলো জায়গা ঘুরে দেখতে গেলে অনেক কিছু মিস করবেন।