এম জামশেদ আহমেদ » » » মীরসরাই উপজেলার ১০ নম্বর মিঠানালা ইউনিয়নের মধ্যম মুরাদপুর গ্রামের বিশিষ্ট সমাজসেবক মরহুম মাওলানা এ.কে.এম নুরুল হুদা মাস্টার। তিনি একাধারে সমাজসেবা ও শিক্ষকতায় সমাজে অবদান রেখেছেন। তাঁর ৩য় সন্তান মরহুম মোঃ আলা উদ্দিন। মীরসরাইয়ের গর্বিত এই কৃতি সন্তান ২০০৬ সালের ২৩ এপ্রিল বগুড়া পল্লী উন্নয়ন একাডেমির সম্মুখে মর্মান্তিক সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত হন। ১৫ বছর পেরিয়ে গেছে তিনি আমাদের মাঝে নেই কিন্তু তাঁর স্মৃতি তাড়িয়ে বেড়াচ্ছে বন্ধু-বান্ধব, আত্মীয়-স্বজনদের। সাত ভাই ও চার বোনের মধ্যে আলা উদ্দিন ৩য় ছিলেন এবং ভাইবোনের সম্মানীয় ও আদুরে ভাই ছিলেন।
তিনি ১৯৭৭ সালে মীরসরাইয়ের মলিয়াইশ উচ্চ বিদ্যালয় হতে কুমিল্লা বোর্ডে মেধা তালিকায় মানবিক বিভাগে ৭ম স্থান অধিকার করেছিলেন, নিজামপুর কলেজ হতে ১৯৭৯ সালে কুমিল্লা বোর্ডে মেধা তালিকায় ৩য় স্থান অধিকার করে কলেজের সুনাম বয়ে এনছেন, যা সেসময় ছিল বেশ আলোচিত। পরবর্তীতে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় হতে বিএসএস (সম্মান) ও এম এস এস (সমাজতত্ত্ব) উভয় পরীক্ষায় ২য় শ্রেণীতে ১ম হয়েছেন।
শিক্ষাজীবন শেষ করে তিনি মাইক্রো ইন্ডাস্ট্রীজ ডেভেলপমেন্ট এসিস্ট্যান্স এন্ড সার্ভিসেস (মাইডাস) ২৭, ধানমন্ডি ঢাকায় এনজিও কার্যক্রমে প্রোগ্রাম অফিসার পদে যোগদান করেন। প্রথমে ক্রেডিট প্রোগ্রামে কাজ করলেও পরবর্তীতে প্রশিক্ষকের দায়িত্ব পালন করেন। যোগ্যতার ও দায়িত্ব পরায়নতার ফলে মাইডাসে তিনি সিনিয়র প্রোগ্রাম অফিসার ও পরবর্তীতে সহকারী মহাব্যবস্থাপক (এজিএম) পদে পদোন্নতি পেয়েছেন। সারাদেশের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ জেলা ও উপজেলা সদরে বিভিন্ন প্রশিক্ষণ কর্মসূচীতে অংশগ্রহণ করেছেন।
মাইডাস’র প্রশিক্ষক : দেশের বিভিন্ন জেলা ও উপজেলা সদরে উদ্যোক্তা উন্নয়ন বিষয়ে প্রশিক্ষণ কর্মসূচী পরিচালনা ও সমাজের শিক্ষিত উদ্যমী পুরুষ মহিলাদের প্রশিক্ষণ দিয়েছেন তিনি। কর্মসূচীর প্রযোজনে দেশের বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গের সাথে পরিচিত হওয়ার সুযোগ পেয়েছেন তিনি।
বিদেশ ভ্রমণ : ভারত, শ্রীলংকা, ভুটান, নেদারল্যান্ড, বেলজিয়াম প্রভৃতি দেশে বিভিন্ন কর্মসূচীর প্রশিক্ষণ গ্রহণের জন্য ভ্রমণ করেছেন এবং বিভিন্ন সেমিনার ও সিম্পোজিয়ামে যোগদান করেছেন। ২০০৪ সালে ভারতের মুম্বাইয়ে বিশ্বায়ন বিরোধী সম্মেলনে তাঁর ছোট ভাই শহীদসহ যোগদান করেছেন।
জ্ঞান পিপাসু আলা উদ্দিন : তিনি সমাজ বিজ্ঞানের শিক্ষার্থী ছিলেন, প্রচুর বই পড়তেন। জাতীয় ও আন্তর্জাতিক বিষয়ে ভাল জ্ঞান রাখতেন। আলাপচারিতায় বুঝা যেতো তাঁর জ্ঞানের ভান্ডার কত সমৃদ্ধ ছিল। হাতের লিখা ছিল চমৎকার। সৃজনশীল চিন্তা চেতনায় উদ্বুদ্ধ ছিলেন তিনি শিক্ষা, কর্মজীবন ও সামাজিকতা সবক্ষেত্রে প্রতিভার পরিচয় দিয়ে গেছেন। সাহিত্য, ইতিহাস, ঐতিহ্য বিষয়ক বই পড়তেন। বই ছিল তাঁর নিত্যদিনের সঙ্গী। বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রাবস্থায় সমাজবিজ্ঞান বিষয়ে স্যারদেও গবেষনা সহযোগী হিসেবে মীরসরাই এর মধ্যম মুরাদপুর, মসজিদ্দা ও হাটহাজারীর জোবরায় কাজ করেছেন।
একজন সাদামনের মানুষ: তিনি তাঁর গ্রামের মানুষের জন্য বিভিন্ন সামাজিক ও অন্যান্য কর্মকান্ডে অংশ নিয়েছিলেন। তাঁর একান্ত ইচ্ছা ছিল একটি পারিবারিক পাঠাগার ও মলিয়াইশ উচ্চ বিদ্যালয়ে আর একটি পাঠাগার গড়ার। ইসলামী ফাউন্ডেশন হতে অনেকগুলো বই সংগ্রহ করে বাড়ীতে রেখেছিলেন। পরিবারের পক্ষ হতে তাঁর মৃত্যুর পর বইগুলো স্থানীয় মাদ্রাসা পাঠাগারের জন্য দান করা হয়েছে।
বিভীষিকাময় ২৩ এপ্রিল ২০০৬ : মাইডাসের একটি প্রশিক্ষক টিম নিয়ে ২০০৬ সালের ২২ এপ্রিল সন্ধ্যায় শেরপুর বগুড়া পল্লী উন্নয়ন একাডেমীতে গিয়েছিলেন। একাডেমী ভবনে রাত্রিযাপন করেন তাঁরা। ২৩ এপ্রিল ২০০৬ হতে এক সপ্তাহব্যাপী বিআরডিবি অফিসারদের উদ্যোক্তা উন্নয়ন প্রশিক্ষক প্রশিক্ষণ কর্মসূচীতে যোগদানের জন্য অংশ নেওয়ার কর্মসূচী ছিল। ২৩ এপ্রিল ভোর ৬.০০ টায় বগুড়া পল্লী উন্নয়ন একাডেমী গেইটের সমুখে সড়ক দুর্ঘটনায় তিনি মর্মান্তিক মৃত্যুবরন করেন (ইন্নালিল্লাহি ওয়াইন্না ইলাহি রাজিউন)। সেদিন রাত ১০ টায় চট্টগ্রামের মীরসরাইয়ে দ্বার বকশ ভূঁইয়া বাড়ী পারিবারিক কবরস্থানে বাবা মরহুম মাওলানা একেএম নুরুল হুদার পাশে অন্তিম শয়ানে শায়িত করা হয়। একটি দুর্ঘটনা পরিবার তথা সমাজের সারাজীবনের কান্না বয়ে যাচ্ছে।
শূন্যতা অনুভব : বন্ধুবান্ধব ও আত্মীয় স্বজনদের সাথে জীবিত থাকাকালীন তাঁর যোগাযোগ ছিল আন্তরিক। তাঁর সাথীরা এখন দেশে বিদেশে অনেকে প্রতিষ্ঠিত। অনেকে মন্ত্রী ও সাংসদ হয়েছেন, কেউবা সচিব মর্যাদায় রয়েছেন। বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের ওয়েব সাইট খুললে এক্সিকিউটিভ প্রোপাইলে তাঁর সাথীদের ছবি দেখা যায়। আলা উদ্দিন ও তাঁর স্ত্রী শামীমা আক্তার দিবা ভাল বেতন ও মর্যাদায় ঢাকাতে চাকুরী করতেন। ঢাকা ছিল তাঁর প্রিয় শহর। মৃত্যুর পর হতে তাঁর পরিবার চট্টগ্রামেই বসবাস করছে।
নিরাপদ সড়ক চাই : সড়ক দুর্ঘটনায় মৃত্যুর মিছিল থামছেনা। প্রতিদিনই দুর্ঘটনার খবর আসছে, পত্রিকার শিরোনাম, মানববন্ধন হচ্ছে। বলতে খুবই কষ্ট লাগছে, সড়ক দুর্ঘটনায় আমরা বিভীষিকাময় পরিস্থিতির মুখোমুখি হলাম। নিরাপদ সড়কের দাবীতে সমগ্র জাতি যেন সোচ্চার। ভাবনার উদ্রেক করবে একটি বিশাল সম্ভাবনার অপমৃত্যু ঘটেছে। জাগ্রত বিবেক বলবে সড়ক দুর্ঘটনায় কোন মৃত্যু কাম্য নয়। সড়ক হউক সবার জন্য নিরাপদ।
লেখক: এম জামশেদ আহমেদ, মেঝ ভাই, সহকারী মহাব্যবস্থাপক (অবঃ), বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংক jamshedbkb@gmail.com
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
- » মিরসরাই সমিতি সংযুক্ত আরব আমিরাতের ইফতার ও দোয়া মাহফিল
- » ভোক্তা নিউজ রিপোর্টিং অ্যাওয়ার্ড পেলেন মিরসরাইয়ের সন্তান গাজী টিভির তৌহিদ রানা
- » পূর্ব হিঙ্গুলী মোহাম্মদপুর ইসলামিক একাডেমীর বার্ষিক ক্রীড়া ও সাংস্কৃতিক প্রতিযোগীতার পুরস্কার বিতরণ
- » হাইতকান্দিতে সমাজসেবক জামশেদ আলমের উদ্যোগে রমজান উপলক্ষে সাড়ে ৩ শত পরিবার পেল খাদ্য সামগ্রী
- » করেরহাটে ওবায়দুল হক খোন্দকার ও নুর নাহার বেগম ফাউন্ডেশনের ইফতার সামগ্রী বিতরণ
- » সাহেরখালীতে দিদারুল ইসলাম ফাউন্ডেশনের উদ্যোগে ৩ শত পরিবারের মাঝে ইফতার সামগ্রী বিতরণ
- » মিরসরাইয়ে বিনামূল্যে ধান বীজ পেল ৯০ জন কৃষক
- » মিরসরাইয়ে অসহায় মেয়ের বিয়েতে আর্থিক অনুদান প্রদান করলো ওমান মিরসরাই সমিতি
- » সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংক লিমিটেড বারইয়ারহাট শাখার উদ্যোগে বৃক্ষরোপণ
- » কেন্দ্রীয় কারাগারে আটক মিরসরাইয়ের নেতাকর্মীদের দেখতে গেলেন বিএনপি নেতৃবৃন্দ