ডেস্ক রিপোর্ট :::: ফেনীর আওয়ামী লীগ নেতা নিজাম হাজারীর সংসদ সদস্য পদ থাকবে কি না- সেই প্রশ্নে বিভক্ত রায় এসেছে হাই কোর্টে।
দ্বৈত বেঞ্চের জ্যেষ্ঠ বিচারক নিজাম হাজারীর সংসদ সদস্য পদ অবৈধ ঘোষণা করলেও অপর বিচারক তার সঙ্গে দ্বিমত পোষণ করেছেন।
নানা জটিলতায় পাঁচ দফা পেছানোর পর বিচারপতি মো. এমদাদুল হক ও বিচারপতি এফ আর এম নাজমুল আহসানের হাই কোর্ট বেঞ্চ বৃহস্পতিবার এই বিভক্ত রায় দেয়।
আইনজীবীরা বলছেন, নিয়ম অনুসারে বিষয়টি এখন প্রধান বিচারপতির কাছে যাবে। প্রধান বিচারপতি বিষয়টি নিষ্পত্তির জন্য অন্য কোনো একক বেঞ্চকে দায়িত্ব দেবেন।
ফৌজদারি অপরাধে দণ্ডিত হওয়ার পর নির্ধারিত পাঁচ বছর পার হওয়ার আগেই নিজাম হাজারী ফেনী-২ আসন থেকে এমপি হয়েছেন- এই অভিযোগে ফেনী জেলা যুবলীগের সাবেক যুগ্ম আহ্বায়ক সাখাওয়াত হোসেন ভূঁইয়া ২০১৪ সালে এই রিট আবেদন করেছিলেন।
এ বিষয়ে সেই সময় জারি করা রুলের ওপর চলতি বছর ৩ অগাস্ট থেকে ১ ডিসেম্বর পর্যন্ত শুনানি করে হাই কোর্ট মঙ্গলবার রায় দেয়। জ্যেষ্ঠ বিচারক মো. এমদাদুল হক রুল ‘অ্যবসলিউট’ ঘোষণা করলেও অপর বিচারক রুল খারিজ করে রায় দেন।
রায়ের পর নিজাম হাজারীর আইনজীবী সাবেক আইনমন্ত্রী শফিক আহমেদ সাংবাদিকদের বলেন, “রায়টি বিভক্ত। আর বিভক্ত রায় হওয়াতে সিদ্ধান্ত হয়নি বলে ধরে নিতে হবে। এখন বিষয়টি প্রধান বিচারপতির কাছে যাবে এবং তিনি একটি বেঞ্চ গঠন করে দেবেন। সেখানে নতুন করে শুনানি হবে।”
একজন বিচারক কেন রুলটি খারিজ করেছেন জানতে চাইলে শফিক আহমেদ বলেন, “এখানে তথ্য বিভ্রাট আছে।… উনি (নিজাম হাজারী) পুরোপুরি জেল খেটেছেন কি না বা কীভাবে বেরুলেন… একবার কারা কর্তৃপক্ষ বলছে উনি সাজা খেটে রেয়াতি প্রথায় বেরিয়ে এসেছেন, পরে আবার অন্যরকম সিদ্ধান্ত দিচ্ছে। সাক্ষী না নিয়ে এখানে সিদ্ধান্ত দেওয়া সঠিক নয় বলে একজন বিচারপতি রুল খারিজ করে দিয়েছেন।”
ফেনী জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক নিজাম হাজারী ২০১৪ সালের নির্বাচনে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন।
‘সাজা কম খেটেই বেরিয়ে যান সাংসদ’ শিরোনামে ২০১৪ সালের ১০ মে একটি জাতীয় দৈনিকে প্রকাশিত প্রতিবেদন যুক্ত করে তার ওই পদে থাকার বৈধতা নিয়ে রিট আবেদনটি করেন ফেনীর যুবলীগ নেতা সাখাওয়াত। তার পক্ষে শুনানি করেন অ্যাডভোকেট কামরুল হক সিদ্দিকী ও সত্যরঞ্জন দত্ত। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল আমিনুর রহমান চৌধুরী।
রিট আবেদনকারীর যুক্তি ছিল, সংবিধানের ৬৬ (২) (ঘ) অনুচ্ছেদ অনুসারে, কোনো ব্যক্তি যদি নৈতিক স্খলনজনিত কোনো ফৌজদারি অপরাধে কমপক্ষে দুই বছরের কারাদণ্ডে দণ্ডিত হন তাহলে মুক্তির পর পাঁচ বছর অতিবাহিত না হওয়া পর্যন্ত তিনি সংসদের সদস্য নির্বাচিত হওয়ার এবং সংসদ সদস্য থাকার যোগ্য হবেন না।
২০০০ সালের ১৬ অগাস্ট অস্ত্র আইনের এক মামলায় দুটি ধারায় ১০ বছর ও সাত বছর কারাদণ্ড হয় নিজাম হাজারীর, যা আপিলেও বহাল থাকে।
সে হিসেবে নিজাম হাজারী ২০১৫ সালের আগে সংসদ সদস্য পদে নির্বাচিত হওয়ার যোগ্য না হলেও তিনি ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির নির্বাচনে সাংসদ হয়ে যান বলে অভিযোগ করা হয় রিট আবেদনে।
প্রাথমিক শুনানি নিয়ে ২০১৪ সালের ৮ জুন বিচারপতি মির্জা হোসেইন হায়দার ও বিচারপতি মুহাম্মদ খুরশীদ আলম সরকারের হাই কোর্ট বেঞ্চ এ বিষয়ে রুল জারি করে।
নিজাম হাজারী কোন কর্তৃত্ববলে ওই আসনে সংসদ সদস্য পদে আছেন এবং ওই আসনটি কেন শূন্য ঘোষণা করা হবে না- তা জানতে চাওয়া হয় রুলে৷ পাশাপাশি অন্তর্বর্তীকালীন নির্দেশনাও দেয় আদালত।
ওই রুলের উপর শুনানি গ্রহণে গতবছরের ১২ নভেম্বর হাই কোর্টের একটি দ্বৈত বেঞ্চের এক বিচারপতি এবং পরে ২ ডিসেম্বর অন্য একটি দ্বৈত বেঞ্চ বিব্রতবোধ করে।
প্রধান বিচারপতি এরপর বিষয়টি শুনানির জন্য বিচারপতি মো. এমদাদুল হকের নেতৃত্বাধীন দ্বৈত বেঞ্চে পাঠান। চলতি বছরের ১৯ জানুয়ারি হাই কোর্টে রুলের উপর শুনানি শুরু হয়।
শুনানিকালে ৩০ মার্চ হাই কোর্ট নিজাম হাজারীর কারাবাসের সময় ও রেয়াতের বিষয়ে প্রতিবেদন দিতে কারা কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ দেয়। সেইসঙ্গে নিজাম হাজারীর বিরুদ্ধে অস্ত্র আইনে করা মামলার রায় ও নথিপত্র ৩০ দিনের মধ্যে দাখিল করতে বলে।
এরপর ২৬ মে অন্য এক আদেশে হাই কোর্ট অস্ত্র মামলায় নিজাম হাজারীর কারাবাসের সময় ও রেয়াতের বিষয় তদন্ত করে আদালতে প্রতিবেদন দাখিল করতে কারা মহাপরিদর্শককে (আইজি-প্রিজন্স) নির্দেশ দেয়।
এ নির্দেশনা অনুসারে আইজি-প্রিজন্সের দেওয়া প্রতিবেদন ১৯ জুলাই আদালতে দাখিল করে রাষ্ট্রপক্ষ। সেখানে বলা হয়, ১০ বছরের সাজার মধ্যে নিজাম হাজারী সাজা খেটেছেন ৫ বছর ৮ মাস ১৯ দিন। কারা কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে সাজা রেয়াত পেয়েছেন ১ বছর ৮ মাস ২৫ (৬২৫ দিন)। রেয়াতসহ মোট সাজা ভোগ করেছেন ৭ বছর ৫ মাস ১৪ দিন। এখনও সাজা খাটা বাকি আছে ২ বছর ৬ মাস ১৬ দিন।
গত ৩ অগাস্ট এই রিটের রুলের ওপর শুনানি শেষ করে আদালত ১৭ অগাস্ট রায়ের দিন ঠিক করে দিলেও ওইদিন নতুন একটি নথি চাওয়া হলে রায়ের তারিখ পিছিয়ে যায় ২৩ অগাস্ট।
কিন্তু ২৩ অগাস্ট আদালতে ফের শুনানিতে অংশ নেন আইনজীবীরা। ‘রক্তদান করে’ নিজাম হাজারী কারাবাস রেয়াতের অধিকারী হয়েছেন বলে তার আইনজীবীরা সেদিন আদালতে যুক্তি দেন।
শুনানির পর আদালত ৩০ অগাস্ট রায় দেওয়া শুরু করলেও নিজাম হাজারীর আইনজীবী নুরুল ইসলাম সুজন সেদিন বলেন, নিজাম হাজারী কারাগারে থাকার সময় মোট ১৩ বার রক্ত দিয়েছিলেন। যার বিপরীতে তিনি ৪৮৬ দিনের কারাবাস থেকে রেয়াত পাওয়ার অধিকারী হয়েছেন। এটা ধরা হলে তার সাজার মেয়াদের চেয়ে বেশি সময় তিনি কারাগারে ছিলেন।
তাদের ওই যুক্তির পর ৩১ অগাস্ট আদালত নতুন প্রতিবেদন চায়। নিজাম হাজারী কারাবাসকালে কত ব্যাগ রক্ত দিয়েছেন, এর ফলে কতদিন কারাবাস রেয়াত পাওয়ার অধিকারী হয়েছেন, ৩০ দিনের মধ্যে তা প্রতিবেদন আকারে দিতে বলা হয় কারা কর্তৃপক্ষকে।
৩ নভেম্বর আবার এ বিষয়ে শুনানি শুরু হলে চট্টগ্রাম কারা কর্তৃপক্ষ আদালতকে জানায়, নিজাম হাজারীর রক্তদানের বিষয়ে কোনো নথি তাদের কাছে নেই।
নিজাম হাজারী কারাবাসকালে কী পরিমাণ রেয়াত পাবেন, সে বিষয়ে উভয় পক্ষের আইনজীবীদের কাছে দুটি আইনের ব্যাখা চেয়ে গত ২২ নভেম্বর চতুর্থ দফায় রায় পেছানো হয়।
সেই ব্যাখ্যা দেওয়ার জন্য ২৮ নভেম্বর দিন রাখা ছিল। ফেনী-২ আসনে সরকারদলীয় এই সাংসদের বিরুদ্ধে ১৯৯১ সালে চট্টগ্রামের ডবলমুরিং থানায় দায়ের করা অস্ত্র আইনের এক মামলার সর্বশেষ তথ্য সেদিন জানতে চায় আদালত।
সেই প্রতিবেদন দেওয়ার নির্ধারিত দিন ১ ডিসেম্বর আদালত জানায়, পুরনো ওই মামলার নথি আগেই আদালতে জমা দেওয়া হয়েছিল। এরপর রায়ের জন্য ৬ ডিসেম্বর দিন রাখে আদালত।
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
- » কেন্দ্রীয় কারাগারে আটক মিরসরাইয়ের নেতাকর্মীদের দেখতে গেলেন বিএনপি নেতৃবৃন্দ
- » মিরসরাইয়ে যুব মহিলা লীগের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী পালিত
- » ওয়াহেদপুর ইউনিয়ন কৃষক লীগের কমিটি ঘোষণা
- » মিরসরাই উপজেলা বিএনপির ঈদ শুভেচ্ছা বিনিময় ও কর্মী সভা
- » মিরসরাই উপজেলা যুবদল ও ছাত্রদলের উদ্যোগে ঈদ পুণর্মিলনী
- » মিরসরাইয়ে জেটেব কেন্দ্রীয় সভাপতি ইঞ্জিনিয়ার ফখরুল আলমের উদ্যোগে ৪ শতাধিক পরিবারের মাঝে ঈদ উপহার বিতরণ
- » মিরসরাইয়ে বিএনপির অবস্থান কর্মসূচি
- » মিরসরাইয়ে যুবদলের আলোচনা সভা ও ইফতার মাহফিল
- » মিরসরাইয়ে জেটেব কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি ইঞ্জিনিয়ার ফখরুল আলমের ঈদ উপহার বিতরণ
- » জোরারগঞ্জ ইউনিয়ন আ’লীগের সাধারণ সম্পাদক করিম মাষ্টারের উদ্যোগে ইঞ্জি. মোশাররফের জন্মদিন পালন